ইউরোপিয়ান ক্লাব ফুটবলের চলতি মৌসুমে অন্যতম আলোচনার বিষয় ছিল মোহাম্মদ সালাহর নতুন চুক্তি। মিশরীয় এই ফুটবলার লিভারপুলের সঙ্গে নতুন চুক্তি করবেন নাকি নতুন কোনো চ্যালেঞ্জের খোঁজে যাবেন সে ব্যাপারে কোনো নিশ্চয়তাই ছিল না। তবে সালাহ লিভারপুলেই থাকছেন। দীর্ঘ সময় ধরে চলা জল্পনার অবসান ঘটিয়ে ক্লাবটির সঙ্গে আরও দুই বছরের চুক্তি করেছেন মিসরীয় ফরোয়ার্ড। সৌদি আরবের লোভনীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিয়ে ইউরোপে নিজের লক্ষ্য পূরণেই মনোযোগ দিচ্ছেন তিনি।
শেষ মুহূর্তে চুক্তিতে অগ্রগতি
গত নভেম্বরে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে মন্তব্য করে সালাহ কিছুটা ধোঁয়াশা তৈরি করেছিলেন। বলেছিলেন, “থাকার থেকে না থাকার দিকেই ঝুঁকেছি।” তবে তার লিভারপুলে থাকার ইচ্ছাও সব সময়ই ছিল।
সূত্র জানিয়েছে, সালাহ, তার এজেন্ট রামি আব্বাস ইসা এবং লিভারপুলের স্পোর্টিং ডিরেক্টর রিচার্ড হিউজেসের মধ্যে আলোচনায় অগ্রগতি আসে মার্চের শেষদিকে। চলতি সপ্তাহেই আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়। ৩২ বছর বয়সী এই তারকার নতুন দুই বছরের চুক্তির ফলে লিভারপুলে তার সময়কাল দাঁড়াবে এক দশকে।সালাহর চুক্তি নবায়ন একটি অনন্য দিক, পাচ্ছেন বিশাল পারিশ্রমিক
লিভারপুল তাকে ধরে রাখতে কম যায়নি। প্রায় ৪ লাখ পাউন্ড সাপ্তাহিক বেতনে চুক্তি নবায়ন করেছে ক্লাবটি, যা এই বয়সে খুব কম ফুটবলারই পান। সালাহর বিকল্প খুঁজে পাওয়া যেমন কঠিন, তেমনি ব্যয়বহুলও হতো। তাই সালাহর ক্ষেত্রটিকে বিশেষ হিসেবেই দেখেছে ক্লাবটি।
এদিকে ট্রেন্ট আলেকজান্ডার-আর্নল্ডের সম্ভাব্য রিয়াল মাদ্রিদ যাত্রা এবং ভার্জিল ভ্যান ডাইকের আসন্ন নতুন চুক্তির মাঝে সব মিলিয়ে সালাহকে ধরে রাখার কৌশলগত দিকটিও গুরুত্ব পেয়েছে।
অর্থ নয়, স্পোর্টিং চ্যালেঞ্জই সালাহর মূল লক্ষ্য
সৌদি ক্লাবগুলো সালাহর পেছনে অনেকদিন ধরেই লেগেছিল। সর্বশেষ জানা গেছে, সালাহকে আট বছরের জন্য প্রায় ৫০০ মিলিয়ন পাউন্ড প্রস্তাব দিয়েছিল সৌদি আরব। এর চেয়েও বড় অঙ্কে (১ বিলিয়ন ইউরো) রিয়াল তারকা ভিনিসিয়ুস জুনিয়রকে টানার চেষ্টা হয়েছে, তবে সালাহর প্রস্তাবটি ছিল আরব বিশ্বে অন্যতম বৃহৎ একটি উদ্যোগ।
তবে সালাহ অর্থের লোভে পা দেননি। তার মূল লক্ষ্য ইউরোপীয় ফুটবলে নিজেকে আরও উঁচুতে নিয়ে যাওয়া। এখনও শারীরিকভাবে বেশ ফিট আছেন মিশরীয় এই তারকা, এবং তার ঘনিষ্ঠরা বিশ্বাস করেন, তার হাতে আরও অন্তত তিনটি মৌসুম রয়েছে শীর্ষ পর্যায়ে পারফর্ম করার।
লক্ষ্য প্রিমিয়ার লিগ, চ্যাম্পিয়নস লিগ, ব্যালন ডি’অর
লিভারপুলের ২০তম লিগ শিরোপা জয়ের পাশাপাশি সালাহর চোখে রয়েছে আরও একবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতার স্বপ্ন। ব্যালন ডি’অর জেতার ইচ্ছাও রয়েছে তার, যেখানে তিনি ২০১৯ ও ২০২২ সালে পঞ্চম হয়েছিলেন। এছাড়া মিসরের হয়ে বিশ্বকাপ ও আফ্রিকান কাপ অব নেশনসে ভালো পারফর্ম করতে চাইলে ইউরোপের শীর্ষ পর্যায়ে খেলা চালিয়ে যাওয়া জরুরি বলেই মনে করেন তিনি।
পরিবারও বড় কারণ
সালাহর সিদ্ধান্তের পেছনে আরেকটি বড় ভূমিকা রেখেছে তার পরিবার। স্ত্রী ম্যাগি ও কন্যা মক্কা ও কাইয়ান জীবন উপভোগ করছেন বেশ ভালোভাবেই। তাই ব্যক্তিগত দিক থেকেও লিভারপুলই সেরা পছন্দ হয়ে উঠেছে সালাহর কাছে। সব মিলিয়ে, এই সিদ্ধান্ত সালাহর পেশাদারিত্ব, লক্ষ্য ও মূল্যবোধেরই প্রতিফলন, যেখানে খেলার চ্যালেঞ্জই অর্থের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।