জন হেনরি ১৮৪০ সালে একটি বস্তিতে
জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি স্টীল ড্রাইভার হিসেবে সিসাপেক ও ওহিও রেলপথে কাজ শুরু
করেছিলেন।
জন হেনরি রেলে কর্মরত বাকি শ্রমিকদের থেকে শক্তিশালী ও ক্ষমতাশালী ছিলেন। তিনি সারাদিন ভারী হাতুড়ি ও বড় স্টীলের পেরেকের সাহায্যে পাথর খনন করতেন। তাঁর সাথে প্রতিযোগিতায় কেউই পারত না। এভাবে হেনরি ও বাকি শ্রমিকদের হাতুড়ির আঘাতে আঘাতে পাথরে খোঁদাই করে বিগ বেন্ড টানেলে তিন বছর ধরে রেলপথের কাজ এগিয়ে চলছিল।
কিন্তু রেলপথে দায়িত্বরত প্রকৌশলী সিদ্ধান্ত নিলেন নতুন স্টীল ড্রিল মেশিন আনার। প্রকৌশলীর ভাবনা ছিল এই ভারী পাথরের পাহাড় খনন করা মানুষের সাধ্যের বাইরে। শ্রমিকরা ড্রিল মেশিন ব্যবহারে আপত্তি জানালেন। কারণ এতে হাজারের মত কর্মহারা শ্রমিককে না খেয়ে মরতে হবে।
জন হেনরি মেশিনের চেয়ে বেশি কাজ করতে পারবেন বলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন। পাথুরে পাহাড়ে নির্মিত নতুন সুড়ঙ্গটি ধোঁয়া-ধূলিতে পূর্ণ ছিল। অনেক কষ্টে শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে হত। কিন্তু জন হেনরি ক্লান্তিহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন।
তিনি ১৪ পাউন্ড ওজনের হাতুড়ির সাহায্যে দিনে ১০-১২ ফুট খনন করতেন! কেউ তার সাথে প্রতিযোগিতায় নামার সাহস পায়নি।
একদিন এক বাষ্পচালিত ড্রিল মেশিন বিক্রেতা এসে জানান দিলেন শক্তিশালী ড্রিল মেশিন দিয়ে কাজ করতে। এটিকে কোন মানুষই হারাতে পারবে না। তারপর শুরু হল হেনরি আর অযথা নতুনের পক্ষপাতী লোকদের চালিত মেশিনের প্রতিযোগিতা!
জন হেনরি হাতে তুলে নিলেন ২০ পাউন্ড ওজনের হাতুড়ি। একদিকে মেশিন অন্যদিকে হেনরির হাতুড়ির শব্দ ধ্বনিত হচ্ছিল সবখানে। হেনরির পক্ষে উপস্থিত শ্রমিকরা চিৎকার ও হর্ষধ্বনি করতে লাগল। হেনরির জয় হতেই হবে। পরাজয়ে না খেয়ে মরবে হাজারের মত শ্রমিক।
৩৫ মিনিট পর....
হেনরি খনন করলেন ১৪ ফুট আর মেশিন মাত্র ৯ ফুট! জয়ধ্বনি বেঁজে উঠল হেনরির হাতুড়ির। উপস্থিত লোকেদের আনন্দ চিৎকারে রেলপথ, সুড়ঙ্গপথ একাকার হয়ে যায়। কিন্তু কয়েক মিনিট পরই আনন্দ বিষাদে রূপ নেয়।
শক্তিশালী হেনরি লুটিয়ে পড়েন মাটিতে। হাতুড়ি পড়ে যায় হাত থেকে। নিঃস্তব্ধ হয়ে ওঠে চারিদিক। সেখানকার দায়িত্বরত প্রধান ব্যক্তি তার কাছে গিয়ে দেখেন হেনরির মস্তিষ্কের রক্তনালী ফেটে গেছে। রেলপথের মহান শক্তিশালী মানব ড্রিলার না ফেরার দেশে চলে গেছেন।
এই লোক কথাটির জন্ম হয়েছিল আফ্রিকান-আমেরিকান দিনমজুরদের মাঝে। তাঁর জন্ম হয়েছিল সম্ভবত তেনেসায়। ১৯ শতকের মাঝের দিকে তিনি আমেরিকার পূর্ব উপকূলে নির্মানাধীন রেলপথে স্টিল ড্রাইভারের কাজ নেন।
তাঁকে নিয়ে রচিত হয়েছে অনেক গান, সিনেমা, গল্প। ২০০০ সালে ডিজনী জন হেনরি নামক একটি কার্টুন চলচিত্র নির্মাণ করে। এটি একই বছর গিফোনি পুরস্কার পায়। হ্যারি বেলাফোন্ট, ফুরি লুইস, পিংক অ্যান্ডারসন, ই মেইনার, পল রবসন এবং আরো অনেকে তাঁকে নিয়ে গান রচনা করেছেন।
বাংলায় গাওয়া বিখ্যাত মে দিবসের গানটির কাজ করেছেন হেমাঙ্গ বিশ্বাস। গানটি জনপ্রিয়তা পায় হেমাঙ্গ বিশ্বাস ও ফকির আলমগীর দুজনের কণ্ঠেই।
অনেক লোক কথায় জানা যায়, বিগ বেন্ড টানেল আজও হেনরির স্মৃতি ধরে রেখেছে। যদি আপনি কখনও আঁধার রাতে এই সুড়ঙ্গপথ দিয়ে হাঁটতে থাকেন অনেক সময় হেনরির সেই ২০ পাউন্ড হাতুড়ির শব্দ শুনতে পাবেন! হতেও পারে।
আপনি নির্জন নদীর ধারে, চাঁদনি রাতে বাসার ছাদে কিংবা পাহাড়ী নির্জন পথে চলার সময় নিজকে নিয়ে একটু ভাবতে থাকুন। যদি কোন শ্রমিকের মনে আঘাত দিয়ে কোন ইমারত গড়েন দেখবেন সেই শ্রমিকের বুকের গহীন থেকে সৃষ্টি হওয়া কষ্টের সুর আপনিও শুনতে পাবেন
মূল ঘটনা: এস.ই. ক্লোসার।