রক্তদান সংক্রান্ত
ভ্রান্তি:
একের রক্তে অন্যের জীবন বাঁচে। কিন্তু অনেক লোক মনে করেন রক্তদান করলে
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। আবার দানকৃত রক্তের ঘাটতি পূরণে কয়েক মাস সময় লাগে।
এসব কারণে অনেকে রক্ত দিতে চান না। কিন্তু এসব ধারণা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন।
রক্তদানের উপকারীতা:
- শরীরে রক্তদানের প্রক্রিয়াটি সব সময় চলতে থাকে। তাই রক্তদানে কোন ক্ষতি হয় না।
- একবারে ৩৫০ মি.লি. রক্ত দিলে ২৪ ঘন্টার মধ্যেই তা পূরণ হয়।
- নিয়মিত রক্তদান করলে হৃদ রোগের ঝুঁকি কমে যায়।
- সাধারণত রক্তের লোহিত রক্ত কণিকা ৩ মাস অন্তর অন্তর মারা যায়। তাই যে কোন ব্যক্তি ৩/৪ মাস পর পর রক্তদান করতে পারে। এ সময় স্বাস্থ্যের অবস্থা, স্থান, কাল, দেশের আইনকানুন ইত্যাদির উপর নির্ভর করে পরিবর্তিত হতে পারে (যেমন- আমেরিকায় ৫৬ দিন পরই আবার দেয়া যায়)।
- আধা লিটার রক্ত তিন জনের জীবন বাঁচাতে পারে।
কারা রক্তদান করতে পারবেন:
- নিরোগ স্বাস্থ্যের অধিকারী।
- ৪৫ কেজি থেকে বেশি ওজনের ১৮-৬০ বছর বয়সের যে কোন ব্যক্তি।
- এইচ.আই.ভি, হেপাটাইটিস বি আক্রান্ত নন এমন ব্যক্তি।
- যারা কমপক্ষে বিগত ১২ সপ্তাহ রক্ত দেয়নি এবং বিগত ১২ মাসে রক্ত নেয়নি।
- রক্তদানের স্থানে কোন ক্ষত বা ঘা না হলে।
- রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা ১২.৫ এর অধিক থাকলে।
- শরীরের যাবতীয় অঙ্গ ভালভাবে কাজ করলে।
কারা রক্ত দিতে
পারবে না:
সাধারণত অসুস্থ্য লোকদের রক্তদান করা উচিৎ নয়। তবে কিছু ক্ষেত্রে কোনভাবেই
রক্ত দেয়া ঠিক হবে না। সেসব হল:
- রক্তদানের আগে ১২ ঘন্টার বেশি যাত্রা, উড়োজাহাজ ভ্রমণ ও ভারী কোন কাজ করলে।
- যাদের নিয়মিত সর্দি-কাশি, গলা খারাপ থাকে ও দীর্ঘদিন এন্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবনকারী।
- কোন কারণে ছোট বা বড় ধরণের অপারেশন হলে।
- হৃদরোগে আক্রান্ত ব্যক্তি।
- অন্তঃক্ষরা গ্রন্থি আক্রান্ত রোগী।
- ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগী যারা ইনসুলিন নেয়।
- কিডনী, পরিপাকতন্ত্রে আক্রান্ত ব্যক্তি।
- হেপাটাইটিস, এইড্স, সিপিলিস, যক্ষা আক্রান্ত ব্যক্তিরা।
- মৃগী রোগী
- বিগত ৩ বছরে জন্ডিস হয়েছে এমন ব্যক্তি (তবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে অথবা ডাক্তারের পরামর্শে দিতে পারেন)।
- এসপিরিন, এন্টিবায়োটিক, স্টেরয়েড জাতীয় ঔষধ সেবনরত।
- ৬ মাসের গর্ভবতী মা যিনি বুকের দুধ পান করাচ্ছেন।
রক্তদানের পূর্বে দাতারা বিভিন্ন প্রশ্ন করে থাকেন। বিশেষ
করে যারা প্রথমবার দেয় তারা। এই লেখায় মোটামুটি সব ধরণের প্রশ্নের উত্তর দেয়া হয়েছে।
আশা করি কোনভাবে ভীত না হয়ে রক্তদানে উৎসাহী হবেন। মনে রাখবেন আপনার দান করা এক ব্যাগ
রক্তে অনেকের মুখে হাসি ফুটবে।
-
লেখক: ভারত থেকে, ইন্টার্ণশীপ শিক্ষার্থী, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি
ও এনিম্যাল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু)।